নাঙ্গলকোট উপজেলা পোস্ট অফিস ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
বারী উদ্দিন আহমেদ বাবর॥
নাঙ্গলকোট উপজেলা পোস্ট অফিসটি ভবনটি গত প্রায় দশ বছর থেকে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবনের ছাদ থেকে নিয়মিত পলেস্তারা খসে পড়া, দরজা, জানালা ভাঙ্গাচুরা, বর্ষাকালে ছাদ ছুঁড়ে বৃষ্টির পানিতে মূল্যবান কাগজপত্র নষ্ট হওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটিতে বৈদ্যুতিক ওয়ারিং করতে না পারায় বৈদ্যুতিক তারগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় যে কোন মুহুর্তে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির অশংকা রয়েছে। এছাড়া ভবনটি থেকে নিয়মিত পলেস্তারা খসে পড়ায় পোস্ট অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন। পোস্ট অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভবনটির ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা গত প্রায় দশ বছর ধরে নিয়মিত পরিদর্শন করে নোট নিয়ে গেলেও নতুন ভবন নির্মাণে এ পর্যন্ত তাদের কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
গত ৭ ফেব্রুয়ারীও কুমিল্লা বিভাগীয় পোস্ট অফিসের পোস্ট অফিস সুপারিনটেনডেন্ট শহিদুল ইসলাম ভবনটি পরিদর্শন করেন। পোস্ট মাস্টারের আবাসিক ভবনটিও জরাজীর্ণ হওয়ায় সম্পূর্ণ ব্যবহারের অনুপযোগী অবস্থায় রয়েছে। পোস্ট অফিসটির মাধ্যমে প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব আয় এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সেবা পরিচালিত হলেও দরজা-জানালা ভাঙ্গাচুরা হওয়ায় সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীন অবস্থায় দীর্ঘদিন থেকে পোস্ট অফিসটি পরিচালিত হয়ে আসছে। এছাড়া পোস্ট অফিসটিতে রয়েছে কর্মচারী সংকট।
জানা যায়, উপজেলা পোস্ট অফিসের মাধ্যমে অফিসিয়াল, ব্যবসায়িক চিঠিপত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশ্নপত্র, পরীক্ষার কাগজপত্র প্রেরণ, বেকার যুবকদের চাকুরির ইন্টারভিউ, এ্যাপয়নমেন্ট কার্ড আসাসহ সাধারণ চিঠিপত্রের সেবার পাশাপাশি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক, পরিবার সঞ্চয়পত্র, তিনমাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, তিনমাস অন্তর পেনশনার সঞ্চয়পত্র, তিন বছর মেয়াদি পিক্সড ডিপোজিট, সাধারণ সঞ্চয় হিসাব, ডাক জীবন বীমা, পোস্টাল অর্ডার, মোবাইল মানি অর্ডার ও সাধারণ মানি অর্ডারের সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। এছাড়া পোস্ট অফিসটির অধীনে একটি সাব পোস্ট অফিসসহ ১৬টি শাখা পোস্ট অফিস রয়েছে। পোস্ট অফিসটির মাধ্যমে প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা রাজস্ব আয় হচ্ছে। পোস্ট অফিসটিতে দু‘জন পোস্টম্যান, একজন প্যাকার এবং তিনজন অপারেটরের পদ শূণ্য রয়েছে।
ভবনটি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভবনের দরজা-জানালা ভাঙ্গাচুরা, ছাদ থেকে নিয়মিত পলেস্তারা খসে পড়ে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। মেঝে ধেবে গেছে। ভবনের ভিতরে-বাহিরে শ্যাওলা জমে স্যাঁত-স্যাঁতে পরিবেশ, ছাদ ছুঁড়ে পানি পড়তে দেখা যায়। বিদ্যুতের তারগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। কাজের নূন্যতম কোন পরিবেশ নেই। পোস্ট মাস্টারের আবাসিক ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় গত দশ বছর থেকে ভবনটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
উপজেলা পোস্ট মাস্টার মো. সেলিম মিয়া বলেন, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভবন ধ্বসের আশংকা নিয়ে আতংকগ্রস্ত অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত কাজ করতে হচ্ছে এবং গ্রাহকরা পোস্ট অফিসে আসতেও ভয় পান। ভবনটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বৈদ্যুতিক ওয়ারিং করা যাচ্ছে না। ফলে বিদ্যুতের তারগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় দূর্ঘটনার অশংকা রয়েছে। ভবনটির দরজা-জানালা না থাকায় নিরাপত্তাহীন অবস্থায় কাজ করতে হচ্ছে। এছাড়া কর্মচারী সংকটে অতিরিক্ত কাজ করতে হচ্ছে। তিনি আরো জানান, আমি এখানে যোগদান করার পূর্বেও কয়েক দফা পোস্ট অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অফিসিয়াল কাজে তদন্তে এসে ভবনের বর্তমান অবস্থা নোট করে নিয়ে যান। কিন্তু দীর্ঘদিনেও নতুন ভবন নির্মাণ হচ্ছে না।
কুমিল্লা বিভাগীয় ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ডাক অধিদপ্তরের অধীনে জরাজীর্ণ ডাকঘর পুর্ণবাসনের প্রকল্পের আওতায় বর্তমান পাঁচটি পোস্ট অফিস ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। নাঙ্গলকোট পোস্ট অফিসের জরাজীর্ণ ভবনের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আমরা পর্যায়ক্রমে নাঙ্গলকোটের জরাজীর্ণ উপজেলা পোস্ট অফিস ভবনটি মেরামত অথবা পূর্ণনির্মাণের কাজ করবো।