www.comillabd.com কুমিল্লাবিডি ডট কম

সত্য সন্ধানে আপোসহীন

আন্তর্জাতিকরাজনীতি

সবার আগে ইশতেহার ঘোষণা সিপিবির

নিজস্ব প্রতিবেদক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে রাজনৈতিক দলগুলো মধ্যে সবার আগে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সংস্কার এবং ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাটের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণসহ ৩০ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে দলটি।

রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনে শনিবার ‘ভিশন মুক্তিযুদ্ধ-৭১’শিরোনামে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।

এতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংবিধান, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও রাজনীতির সংস্কার, নির্বাচানী ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন, বিকল্প অর্থনৈতিক নীতি প্রতিষ্ঠা করা, ঘুষ দুর্নীতি লুটপাটের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত জনগণ যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। সেই স্বপ্ন হলো ‘ভিশন মুক্তিযুদ্ধ-৭১’।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে তাদের অক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। এমনকি এ দুটি দলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দ্বি-দলীয় রাজনৈতিক কাঠামো দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। বরং যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারা ক্রমান্বয়ে আরও কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছে।

জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে হলে বিদ্যমান ‘ব্যবস্থার বদল’করা এবং দ্বি-দলীয় রাজনীতির বৃত্ত ছিন্ন করে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি গড়ে তোলা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন তিনি।

সেলিম বলেন, লুটপাটের ‘ব্যবস্থা বদল’করে বিকল্প রাজনৈতিক কর্মসূচি ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে সিপিবি বদ্ধপরিকর।

এ সময় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘কাস্তে’মার্কা সিপিবির মনোনিত প্রার্থীদের এবং বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্য প্রার্থীদের ‘মই’ও ‘কোদাল’মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

নির্বাচনে ৩০ দফা ইশতেহারে সিপিবির সভাপতি জানান, তারা ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংবিধান, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও রাজনীতির সংস্কার সাধন করবেন।

বিতর্কিত ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’সহ মৌলিক অধিকার খর্বকারী সব বিতর্কিত কালা কানুন বাতিল এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে সিপিবি।

ইশতেহারে বলা হয়, গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হবে সিপিবির লক্ষ্য। এছাড়া সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু, ‘রুটিন কাজ’ এ জন্য ‘নির্বাচনকালীন সরকার’এর বিধান সংবিধানে যুক্তকরণসহ নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করবে দলটি।

বিকল্প অর্থনৈতিক নীতি ও ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস করা, ঘুষ-দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’নীতি গ্রহণ করাও বাম এ দলটির লক্ষ্য।

এ ছাড়া সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদ রুখতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন, মাফিয়া-গডফাদারদের দমন এবং অপরাধী চক্রের দেশি-বিদেশি অর্থ ও শক্তির উৎসসমূহ উৎপাটন করাসহ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-দুর্বৃত্তায়ন ও মাফিয়াতন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া হবে বলে জানান সিবিপির সভাপতি।

অন্যদিকে অভিন্ন কলরেট ও ইন্টারনেট মূল্য নির্ধারণ, ভিওআইপ ব্যবসা বন্ধ, ইউনিয়ন পর্যায়ে ওয়াইফাই জোন তৈরি, ‘ই-গভরনেন্স’চালু, সাইবার ক্রাইম বন্ধ করা, ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্ত নিশ্চিতকরাসহ তথ্য-প্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে সার্বজনীন করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা, ‘পরিবেশ আদালত’গঠন করে পরিবেশ বিনষ্টকারীদের বিচারের আওতায় আনা, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সুন্দরবন এলাকায় শিল্প-কারখানা নির্মাণ বন্ধ, নদী পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ গ্রহণসহ প্রকৃতি, পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষা করার বিষয়ে ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া জাতীয় স্বার্থ রক্ষা ও বিকল্প জ্বালানি নীতির বাস্তবায়ন করা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন করা, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও যানজট রোধ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি উন্নয়ন ও বন্যা সমস্যার সমাধান করা হবে বলে ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়।

স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করা সিপিবির অন্যতম লক্ষ্য হবে জানিয়ে সেলিম বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ঝুলে থাকা সমস্যার সমাধান করা হবে।

তিনি বলেন, পাকিস্তান থেকে পাওনা আদায়, আটকে পড়া পাকিস্তানী নাগরিকদের ফেরত পাঠানো, ভারত থেকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, সীমান্তে হত্যা বন্ধ ও বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস করা, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দিয়ে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী, আব্দুল্লাহ ক্বাফী রতন ও অনিরুদ্ধ দাস অঞ্জন, কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বাছাই শুরু হবে ২ ডিসেম্বর; প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ ডিসেম্বর; প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ ডিসেম্বর আর ভোটগ্রহণ ৩০ ডিসেম্বর।

error: Content is protected !!